শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন
ক্ষুধা সূচকে বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। গতবারের চেয়ে উন্নতি করলেও বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। গতবার স্কোর ছিল ২৬ দশমিক ১। এবার কমে হয়েছে ২৫ দশমিক ৮।
২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৬। এবার দুই ধাপ পেছালেও ২০০০ সালের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০১৯’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, হেলভেটাস বাংলাদেশ এবং ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফি যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. রীনা পারভীন, বাংলাদেশ পুষ্টি কাউন্সিলের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ, নিউট্রিশন সার্ভিসেসের লাইন ডাইরেক্টর ডা. এসএম মোস্তাফিজুর রহমান।
বক্তব্য দেন কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডাইরেক্টর একেএম মুসা, ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফি বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ফিলিপ ড্রেসরুসি ও হেলভেটার্স বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডাইরেক্টর উম্মে হাবিবা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৬ দশমিক ১। ২০০৫ সালে সেটি ভালো হয়ে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৭ এ। ২০১০ সালে সেটি আরও ভালো হয়ে স্কোর দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩। সর্বশেষ ২০১৯ এ হয়েছে ২৫ দশমিক ৮। স্কোরের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে ভালো করলেও দেশের কোনো কোনো জেলায় অপুষ্টি, শিশু মৃত্যু হার এবং শিশুদের অপচয় বা খর্বকায়ন ব্যাপক রয়েছে। সেসব স্থানে সার্বিক কর্মসূচির পাশাপাশি বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। এছাড়া বায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় এখন থেকে সতর্ক দৃষ্টি রখতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শিশু খর্বকায়ন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে সিলেট বিভাগে। এর পরই রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যাপক বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা, অতিদরিদ্র ২ কোটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ব্যাপক শহরায়ন মোকাবেলা করা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত করতে কৃষি খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে দেশে খাদ্য ঘাটতি তেমন একটা না থাকলেও আমরা পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নই।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে। তাই আমরা যদি কৃষিতে মনোযোগ না দেই তাহলে দেশে একসময় খাদ্য সংকট প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই)-২০১৯ এ ২৫.৮ স্কোর করে বাংলাদেশ ‘গুরুতর’ বিভাগে পড়েছে।
যদিও বিগত বছরগুলোর তুলনায় দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। জিএইচআই-২০১৯ অনুযায়ী, বিবেচিত ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৮তম স্থানে রয়েছে। এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০১৪ সালের ডাটা নিয়ে। তবে এখনকার তথ্য নেয়া হলে আমাদের অবস্থান আরও অনেক ভালো হতো।
তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছি। সারের দাম কম থাকার সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। এই ভর্তুকিকে আমরা বিনিয়োগ হিসেবে দেখছি।’
ফিলিপ ড্রেসরুসি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এমতাবস্থায় অপুষ্টি ও পুষ্টির নিরাপত্তাহীনতা হ্রাস করার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হল জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পুষ্টি-সংবেদনশীল কৃষিকে সামনে নিয়ে আসা।
এটি অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে সমন্বিত প্রচেষ্টার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে দৃশ্যমান বাস্তবসম্মত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’ একেএম মুসা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের পুষ্টি সুরক্ষার জন্য বিশাল হুমকির সৃষ্টি করছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ- এসবই ফসলের উৎপাদনশীলতা এবং পুষ্টি সুরক্ষাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।’
উম্মে হাবিবা বলেন, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে ক্ষুধা হ্রাস করেছে। তবে ক্ষুধার তীব্রতা এখনও গুরুতর রয়েছে। অপুষ্টি, শিশু অপচয় শিশু খর্বকায়ন এবং শিশু মৃত্যুহার- এ চারটি কারণের মধ্যে ৩৬ দশমিক ২ স্কোর নিয়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের খর্বকায়নের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ খুব একটা সক্ষম হয়নি। যদিও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে বাংলাদেশ।